রংপুর প্রতিনিধি: রংপুর জেলার ৩৪৫টি পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে সুন্দর ডিজাইন, রঙিন টিন ও রং করা ওয়ালের বাড়ি। ঝকঝকে বাড়িগুলো নজর কাড়ছে সবার। স্বপ্নের বাড়ি পেয়ে তারা খুব খুশি। তাঁরাগঞ্জের নছিমন বেওয়ার আবেগ ছিল এমন- ‘ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে ঘুরি, স্বপ্নেও পাকা বাড়ির আশা করি নাই। আর আজ পাকা বাড়ি পেয়ে গেলাম।’
নছিমন বেওয়ার স্বামী লেকচার মিয়া ৩ বছর আগে মারা গেছেন। নিজের থাকার মতো জমি বা বসত ঘর ছিলো না। সারা দিন ভিক্ষা করে সরকারি খাস জমিতে ঝুপড়ি ঘরে থাকতে হতো বাক প্রতিবন্ধী ছেলে নজরুল ইসলামকে (৪২) সঙ্গে নিয়ে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টি.আর-কাবিটা কর্মসূচির আওতায় দুর্যোগ সহনীয় বাসগৃহ নির্মাণের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে সবার জন্য বাসস্থান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘জমি আছে ঘর নাই’ প্রকল্পের পাকা ঘর পেয়ে খুবই খুশি নছিমন বেওয়া। তার বাড়ি রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের আদর্শপাড়া গ্রামে।
মিঠাপুকুর ফুলচকি গ্রামের ভিক্ষুক রশিদা বেগম জানান, আজ শান্তিতে ঘুম যাবার পাইছোল। শেখের বেটিকে ধন্যবাদ দেও। হামার মতন নিঃস্ব মানুষগুলোর পাশত দাঁড়াবার জন্যে। টাকা পয়সা ছাড়া ঘর পামো এমন আশা কখনও করিনি। ঈদুল আজহার আগে নতুন পাকা ঘরে উঠেছেন কুর্শা ইউপির হাড়িকাটা গ্রামের জাহিদুল ইসলাম। তিনি পাকা বাড়ি পেয়ে মহাখুশি। তিনি জানান, স্বপ্নই দেখিনি পাকা ঘরে ঘুমাব বা ঈদ করবো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে দিয়েছেন তারা। তিনি আরও বলেন, হামার অভাবের সংসার। সন্তানদের নিয়ে কুড়েঘরে গাদাগাদি করে বসবাস করে আসছিলাম। অতীতে ঝড়-বৃষ্টিতে ঘরে পানি পড়তো। বাচ্চাদের অনেক কষ্ট হতো। প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ইটের পাকা বাড়িতে এখন আমরা শান্তিতে ঘুমোতে পারছি।
রংপুর ডিআরও সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে গ্রামীণ অবকাাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টি.আর) কর্মসূচির আওতায় বাস্তবায়িত দুর্যোগ সহনীয় বাসগৃহ ৩৪৫ টি শতভাগ বাস্তবাায়ন হয়েছে। এর মধ্যে রংপুরের গঙ্গাচড়ায় ৫৩টি, তারাগঞ্জে ৪৭টি, বদরগঞ্জে ৪৩টি, রংপুর সদরে ৩৪টি, পীরগঞ্জে ৪২টি, কাউনিয়ায় ৪১টি, মিঠাপুকুরে ৪১টি, পীরগাছায় ৪৪টি। মোট দশ কোটি চৌত্রিশ লাখ একান্ন হাজার সাত শত টাকা খরচে বাসগৃহগুলো শত ভাগ বাস্তবায়ন হয়েছে বলে জানান, রংপুর জেলার ডিআরও আক্তারুজ্জামান। রংপুর বিভাগের বিভাগীয় মূল্যায়ন কমিটির সভাপতি বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল ওয়াহাব ভুঁঞা, রংপুর জেলার ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসক মো. আসিফ আহসান বাসগৃহগুলো তদারকি করেন।
মিঠাপুকুর উপজেলার পিআইও সূত্রে জানা গেছে, মিঠাপুকুরে ৪১টি দুর্যোগ সহনীয় গৃহ নির্মাণের জন্য তারাগঞ্জের পিআইও মুশফিকুর রহমানের তদারকিতে তার উপজেলায় স্থানীয় নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে পৃথক ৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির মাধ্যমে এ বাড়িগুলো তৈরি করা হয়। কমিটিতে স্থানীয় চেয়ারম্যান কিংবা মেম্বারকে বানানো হয় সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ১জন ও সদস্য করা হয়েছে ৩জনকে। বাড়িগুলো হচ্ছে ১৪ নং দূর্গাপুর ইউনিয়নসহ সকল ইউনিয়নে মিঠাপুকুরে ৪১টি বাস গৃহ শতভাগ সম্পন্ন করে হস্তান্তর করা হয়েছে।
মিঠাপুকুর উপজেলা প্রকল্প বায়স্তবায়ন কর্মকর্তা মুশফিকুর রহমান জানান, গুণগত মান বজায় রেখে, সুন্দরভাবে সকল নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় ১৭টি ইউনিয়নের ৪১টি পরিবারকে পাকা ঘর নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে। এতে করে গ্রামের পিছিয়ে পড়া মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ও জীবনযাত্রার পরিবর্তন হবে। রংপুর জেলা প্রশাসক আসিব আহসান বলেন, জেলার অসচ্ছল, দুঃস্থ, বিধবা ও প্রতিবন্ধী নারী-পুরুষ গৃহহীন পরিবারগুলোর জন্য মাথা গোঁজার ঠাঁই হিসেবে প্রধানমন্ত্রী দুর্যোগ সহনীয় বাসগৃহ নির্মাণ প্রকল্পের মাধ্যমে ৩৪৫টি আধাপাকা বাড়ি তৈরির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। বাস্তবায়িত বাড়িগুলো নিয়ম মোতাবেক শত ভাগ গুনগত মান রক্ষা করে, ডিজাইন অনুযায়ী নির্মাণ করা হয়েছে। ঈদুল আযহার আাগেই বাড়ির কাজ শেষ হয়।